রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

সাত সপ্তাহ পর চালু হলো দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ-ট্রেন

আমার সুরমা ডটকম:

লকডাউন বাড়ল ৩০ মে পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন জারি: হোটেল-রেস্তোরাঁয় অর্ধেক গ্রাহককে বসিয়ে খাবার খাওয়ানো যাবে।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ ৩০ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। তবে লকডাউন বাড়লেও এ সময় চলাচল করতে পারবে সবধরনের গণপরিবহন। তার মানে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল করবে। আজ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করবে দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন। গতকাল রোববার মধ্যরাত থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাস ও লঞ্চ মালিক সমিতি। অন্যদিকে, রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আজ থেকে আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেন চলাচল করবে। এক আসন ফাঁকা রেখে চলবে ট্রেন। ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে অনলাইনে। কাউন্টারে কোনো টিকিট বিক্রি হবে না।

গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে করোনা ভাইরাসজনিত রোগের বিস্তার রোধে সার্বিক কার্যাবলী-চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা বাড়ানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্তমান করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বিধিনিষিধের সময়সমীমা রোববার মধ্যরাত থেকে আগামী ৩০ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হলো। সরকারি আদেশে পূর্বের শর্তাবলী কার্যকর থাকলেও আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচল এবং খাবার হোটেলে বসে খাবারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আন্তঃজেলাসহ সব ধরনের গণপরিবহন আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। তবে অবশ্যই যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরিধানসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক গ্রাহককে বসিয়ে খাবার খাওয়াতে পারবে। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সব সিনিয়র সচিব/সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এদিকে, দীর্ঘ ৪৮ দিন বন্ধ থাকার পর চালু হচ্ছে দূরপাল্লার বাস। সরকারের নির্দেশনার পর কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ থেকে দূরপাল্লার বাস চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। গতকাল রোববার সমিতির সকল জেলা শাখা ও ইউনিটগুলোতে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেন সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। চিঠিতে তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা অনুসরণ করে সোমবার থেকে দূরপাল্লা রুটের বাস চলাচল করবে।

নির্দেশনাগুলো হলো ১. মাস্ক ছাড়া কোনও যাত্রী গাড়িতে উঠতে পারবে না। গাড়ির চালক, সুপারভাইজার কন্ডাক্টর, হেলপার এবং টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাদের হাত ধোঁয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানি, হ্যান্ড-স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

২. গাড়িতে সিটের অর্ধেক যাত্রী বহন করতে হবে। অর্থাৎ ২ সিটে ১ জন যাত্রী বসবে। অর্ধেক যাত্রী বহন করার প্রেক্ষিতে বিআরটিএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাত্রীদের নিকট থেকে বর্তমান ভাড়ার অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ ভাড়া আদায় করা যাবে।

৩. যাত্রার শুরু ও শেষে গাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদি মেনে চলতে হবে।

উল্লেখিত নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সমিতির সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, সরকার দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতি দেয়ায় পরিবহন মালিক-শ্রমিক সবাই খুশি। আমরা এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। ভুক্তভোগী বাস-মালিক খন্দকার ওমর ফারুক বলেন, লকডাউনে সবকিছু চলাচল করলেও শুধুমাত্র দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখার কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মালিকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। শ্রমিকরাও না খেয়ে কোনোমতে জীবনযাপন করে আসছে।

এমতবস্থায়, সরকার দূরপাল্লার বাস চালু করায় সবাই উপকৃত হলো। আমরা মালিকরা যে লোকসানের মধ্যে পড়েছি, সেটা এক বছরেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তারপরেও বাস চললে পেটের ভাত অন্তত জুটবে।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার বাস চলাচল করা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। কারণ এর আগে সিটি সার্ভিসের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বেশিরভাগ বাসই সেই নিয়মের তোয়াক্কা করে না। প্রতিটি আসনে যাত্রী নেয়ার পর দাঁড় করিয়েও যাত্রী তোলা হয় বাসগুলোতে। অথচ ভাড়া ৬০ শতাংশ বেশিই নেয়া হয়। এ নিয়ে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা লেগেই থাকে। ভুক্তভোগি যাত্রীরা বলেন, আমাদের কাছে থেকে ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েও বাস মালিকরা এ অনিয়ম করে আমাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এটা বন্ধ করতে হবে। জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, এখন থেকে এ বিষয়ে নজর দেয়া হবে। কারো বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, আজ থেকে অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। এ প্রসঙ্গে গতকাল রোববার রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, সোমবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তবে শুরুতে ২৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। এরপর ধীরে ধীরে পরিধি বাড়ানো হবে। রেলমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে এক আসন ফাঁকা রেখে টিকিট বিক্রি করা হবে। ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হবে। তবে কাউন্টারে কোনো টিকিট পাওয়া যাবে না। সব টিকিট বিক্রি হবে অনলাইনে।

এদিকে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা আসার পর যাত্রী পরিবহনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, প্লাটফরমে ধোঁয়া মোছার কাজ চলছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ট্রেনের কোচগুলো পরিষ্কার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কমলাপুর লোকোশেডে ইঞ্জিন মেরামতের কাজ চলছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালন) শাহাদাত আলী সরদার বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিধিনিষেধ জারির পর গত ৫ এপ্রিল থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ রয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তের পর আমরা ট্রেন চালানোর প্রস্তুতিসম্পন্ন করেছি। তিনি বলেন, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ট্রেনগুলোর ট্রায়াল রান করা হয়েছে নিয়মিত।

অন্যদিকে, গতকাল মধ্যরাত থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্র জানায়, সরকারি নির্দেশনা পেয়ে গতকাল দুপুরের পর থেকে লঞ্চগুলোকে প্রস্তুত করা হয়। নিয়ম মেনে রাত ১২টার পর দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ছেড়ে যায় দূরপাল্লার বেশ কয়েকটি লঞ্চ। এর আগে লঞ্চ মালিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে লঞ্চ চলাচলের দাবি জানান। যদিও বাস ও ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা গেলেও লঞ্চের ক্ষেত্রে তা একেবারেই দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা জানান, সরকারের নির্দেশ পালন না করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হোক তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

অন্যদিকে, নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউনের মধ্যে হোটেল রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক মানুষ বসে খাবার খেতে পারবে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকানসমূহে আসন সংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহিতাকে সেবা প্রদান করতে পারবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। তখন থেকেই খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহের সুযোগ রাখা হয়, বসে খাবার গ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৮ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। চার দফা বাড়ে লকডাউনের মেয়াদ। সেই মেয়াদ শেষ হবে হয় গতকাল রোববার মধ্যরাতে। এর আগে গত শনিবার বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, গত বছর থেকে করোনাভাইরাসে ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে সারা দেশে প্রায় অর্ধেক হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-রেস্তোরাঁ খুলতে চান মালিকরা। তা না হলে রাস্তায় নামা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকবে না বলে জানিয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন’ হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে দূর পাল্লার বাস, লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ঈদেও লঞ্চ, ট্রেন এবং দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছিল। এর আগে গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ১৮ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দফা বন্ধ রাখা হয়। সে সময় ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সরকারি অফিস বন্ধ ছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com